সুন্দর ও আকর্ষণীয় টানটান, উজ্জ্বল ত্বক সকলেই চায়। বয়স বাড়লে, পুষ্টিজনিত খাবার কম খেলে, হঠাৎ ওজন কমলে এবং ডার্মিসের কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের কমতে দেখা দিলে, ত্বক ঝুলে যায়। চামড়ায় ভাজ পড়ে যাওয়া আমাদের সৌন্দর্যের উপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। তাই প্রাকৃতিকভাবে শরীরের চামড়া টাইট করার উপায় জেনে, আপনার ত্বকের পরিচর্যা করতে পারেন।
আমাদের ত্বকের সংকোচন ও প্রসারণের ক্ষমতা ত্বকের ইলাস্টিসিটি হিসেবে পরিচিত। নানাবিদ কারণে এই ইলাস্টিসিটি কমতে থাকে এবং ত্বক ঢিলে হয়ে যায়। ত্বকে ভাঁজ পড়া ও চামড়া ঝুলে যাওয়া থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। কারণ বৃদ্ধ বয়সে এটি স্বাভাবিক বিষয়। তাই যৌবনকাল থেকেই এই ইলাস্টিসিটি দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রাকৃতিকভাবে শরীরের চামড়া টাইট করার উপায় গুলো জেনে নিন এখানে।
প্রাকৃতিকভাবে শরীরের চামড়া টাইট করার উপায়
শরীরের চামড়া টাইট করার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে সেগুলোর মূল্যমান তুলনামূলক বেশি হয়। এছাড়া তাতে নানা রকম কেমিক্যালের মিশ্রণ থাকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে শরীরের চামড়া ঝুলা রোধ করা যায়। নিচে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যবহার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
(১) মধুর ব্যবহার
মধু আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় এবং রূপচর্চায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি আমাদের ত্বককে ময়েশ্চারাইজ এবং ডিটক্সিফাই করতেও সহায়তা করে। চামড়ার ঝুলে পড়া রোধে নিয়মিত ত্বকের উপর মধু মাখা যায়। এক্ষেত্রে আপনার মুখের উপর মধু মেখে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
ভালো ফলাফল পেতে অ্যালোভেরা, অন্যান্য তেল এবং গাজরের রসের সাথে মধুর মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। গাজরের রস আমাদের শরীরকে যেভাবে শক্তি জোগায়, তেমনি ত্বকও টানটান রাখে। এক্ষেত্রে প্রথমে গাজর ব্লেন্ড করে তার রসের সাথে অল্প একটু মধু মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রনটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(২) কফির ব্যবহার
ত্বকের ঝুলে পড়া রোধ করতে কফি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এর মধ্যে ক্যাফেইন থাকে, যা অক্সিডেটিভ চাপ কমিয়ে ত্বককে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। একইসাথে, এটি UV রশ্মি ও ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ব্যবহারের জন্য কফির গুঁড়োর মধ্যে অল্প একটু নারকেল তেল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর আলতোভাবে ম্যাসাজ করে ত্বকের উপর লাগান। এবার হালকা হাতে ২-৩ মিনিট স্ক্রাব করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
(৩) শসার ব্যবহার
রূপচর্চায় শসার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। শসা আমাদের ত্বককে টানটান করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এই উপাদানটি আপনার ত্বককে মসৃন সুন্দর ও টানটান করবে। বেশ কয়েকভাবে শসার ব্যবহার করা যায়। যেমন- শসা গোল গোল কুঁচি করে ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে রাখা অথবা শসার রস ত্বকে ব্যবহার করা।
ভালো ফলাফল পেতে শসা ব্লেন্ড করে রস বের করে নিন। সম্ভব হলে এর সাথে কোন একটি তেল বা মধুর মিশ্রণ করতে পারেন। তারপর শসার রস বা মিশ্রণটি শরীরে মেখে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষার পর ধুয়ে ফেলুন।
(৪) অ্যালোভেরা জেল
রূপচর্চায় বিভিন্নভাবে অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকে হাইলোরনিক অ্যাসিড। এটি কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ব্যবহারের জন্য, প্রথমে অ্যালোভেরার তাজা পাতা থেকে জেল বের করে নিন। তারপর এই জেল ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এবার ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ত্বকে টানটান ভাব দেখতে পাবেন। ত্বককে টানটান এবং দৃঢ় করতে সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
(৫) লেবুর রস
সাধারণত রূপচর্চায় লেবুর রসের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। তবে ত্বককে ডিটক্সিফাই করতে, জীবাণুমুক্ত রাখতে এবং ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতে প্রাকৃতিক এই উপাদানটি ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, যা বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।
ভালো ফলাফল পেতে, মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর তুলোয় নিয়ে আপনার ত্বকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন বার এটি করলে চামড়া শক্ত ও টান দেখাবে।
(৬) কলার ব্যবহার
কলা ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং নানা রকম পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কলার মধ্যে প্রাকৃতিক পটাশিয়াম, ভিটামিন ও তেল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য খাদ্য উপাদান। এগুলো আমাদের শরীরের চামড়ার বলিরেখা কমাতে এবং ত্বক টানটান রাখতে গভীরভাবে সহায়তা করে।
ব্যবহারের জন্য প্রথমে কলা ম্যাশ করে নিন। তারপর সেই পেস্টটি আপনার ত্বকে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর এটি শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। সাধারণত মুখের চামড়া ঝুলে গেলে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি ব্যবহার করা অনেক বেশি কার্যকর।
(৭) নারকেল তেল
নারকেল তেল একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তা উন্নত করতে সহায়তা করে। গোসলের আগে নারকেল তেল আপনার শরীরের ত্বকে মেসেজ করুন এবং কিছুক্ষন রেখে গোসল করে নিন। এছাড়াও আপনার মুখের ত্বক ঝুলে যাওয়া বন্ধ করতে নিয়মিত রাতে ঘাড়ে এবং মুখে নারকেল তেল মেসেজ করুন। এবং সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন।
(৮) প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার
শরীরের চামড়া ঝুলে গেলে তার টানটান করে তুলতে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক তেলের ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- আর্গান অয়েল, আমন্ড অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল ইত্যাদি। রাতে ঘুমানোর পূর্বে আপনার ত্বকে যেকোন একটি তেল নিয়ে অল্প কিছুক্ষণ হালকাভাবে মালিশ করুন।
সারারাত এভাবে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। এসকল তেলের মধ্যে থাকে ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে বার্ধক্য দূর হয়ে ত্বক টানটান থাকে।
(৯) ডিমের সাদা অংশ
রূপচর্চার নানা কাজে ডিম, বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করা যায়। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এটি ত্বকের টানটান ভাব এবং দৃঢ়তা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
ব্যবহারের জন্য, ডিমের সাদা অংশ ফেনা না হওয়া পর্যন্ত ফেটিয়ে নিন। তারপর ব্রাশ ব্যবহার করে আপনার ত্বকে লাগান। এবার ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলেই অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভালো ফলাফল পাবেন।
চামড়া টাইট রাখতে যে সকল জীবনব্যবস্থা মানতে হবে
দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় কিছু বিষয় অনুসরণ করে শরীরের চামড়া টাইট রাখতে পারবেন। যেমন:
(১) পর্যাপ্ত পানি পান করা:
শরীরের বেশিরভাগ অংশই পানির উপর নির্ভরশীল। তাই ত্বকের টানটান ও উজ্জ্বল ভাব ধরে রাখতে নিয়মিত ৮-১২ গ্লাস পানি পান করুন।
(২) স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন:
আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ই, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য সকল উপাদানই সঠিক পরিমানে রাখতে চেষ্টা করুন। তবে একই পুষ্টির জন্য কোন খাবারে চর্বি কম, তা খেয়াল রাখতে হবে। শুধু মাছ, মাংস, ডিম নয়, বরং শাকসবজি থেকে বেশিরভাগ পুষ্টি গ্রহনের চেষ্টা করতে হবে।
(৩) চিনি কম খান:
চিনি চামড়া ঝুলে যাওয়ার অন্যতম কারন। তাই চিনি কম খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মিষ্টি ফল, যেমন- বেরি,তরমুজ, আম, কমলা,আঙ্গুর, কলা, পেঁপে, কিউই, আপেল ইত্যাদি খেতে পারেন।
(৪) নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
শরীরের ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করলে চামড়া ঝুলে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে ওয়েট লিফটিং ও হালকা পেটের ব্যায়াম করুন। এতে শরীরের চামড়া শক্ত থাকে।
এসকল জীবনযাপন ব্যবস্থার পাশাপাশি উপরোক্ত প্রাকৃতিকভাবে শরীরের চামড়া টাইট করার উপায় গুলোর যেকোনো একটি নিয়মমাফিক ব্যবহার করতে পারেন।
মুখের চামড়া টাইট করার উপায়
মানুষের দৈহিক সৌন্দর্যের প্রধান অংশ হলো তার মুখ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, খাদ্যাভ্যাসের কারনে কিংবা শরীরের ওজন হঠাৎ কমলে বা অন্যান্য কারনে মুখের চামড়া ঝুলে যায়। বয়স হলে চামড়া ঝুলে যাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও কিছু উপায়ে দীর্ঘদিন ত্বক সতেজ রাখা যায়।
আরো পড়ুন: শীতকালে ঠোঁট গোলাপি করার উপায়
ত্বকের দৃঢ়তা ধরে রাখার জন্য উপরোক্ত জীবনব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক উপায়গুলো বাড়িতেই ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে দীর্ঘদিন মুখের চামড়া টাইট বা টানটান রাখতে পারবেন
ওজন কমানোর পর ত্বক শক্ত করার উপায়
অধিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের ওজন কমানোর পর, শরীরের চামড়া ঢিলে হয়ে যায় এবং ত্বকে ভাজ পড়তে থাকে। এসময় চামড়ার কোলাজেন বৃদ্ধির মাধ্যমে, শরীরের চামড়া টাইট করার উপায় মেনে, চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে আপনার ত্বক শক্ত এবং টানটান করতে পারবেন।
শেষকথা
উপরোক্ত প্রাকৃতিকভাবে শরীরের চামড়া টাইট করার উপায়গুলো অনুসরণের পাশাপাশি আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন ব্যবস্থা স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী করলে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের টান থেকে দূরে থাকতে পারবেন। এতে আপনার ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুন।
সম্মানিত ভিজিটর আমি নজরুল ইসলাম,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং লাইফস্টাইল সম্পর্কে লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।