তালমাখনা কি? তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তালমাখনা (Talmakhna)- একটি পুষ্টিকর, শুক্রবর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়নকারক খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। এটি একটি উৎকৃষ্ট ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। তালমাখনা শব্দটির সাথে আমরা সাধারণভাবে তেমন পরিচিত না। তবে ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। তালমাখনা কি? তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন এই লেখাতে।

তালমাখনা কি?

এক ধরণের বর্ষজীবি ভেষজ উদ্ভিদ তালমাখনা। এর ইংরেজি নাম- Marsh Barbel। এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবকিছুই ঔষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর, যেমন – ডাইয়াসটেস, অ্যালকাডএডস, লিপেস, ফাইটোস্টেরোল, এনজাইম ইত্যাদি।

তালমাখনা কি

তালমাখনা গাছ বা গাছের পরিচিতি

এক ধরনের লতাগুল্ম বর্ষজীবি ভেষজ ঔষধি গাছ তালমাখনা। এই উদ্ভিদটি লম্বায় প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত হয়। এটি একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ হলেও ডিসেম্বর মাসে শুধুমাত্র বছরে একবার ফুল আসে। এই গাছের ফুল সাধারণত লালচে এবং বেগুনি রঙের হয়। তাছাড়া এতে কিছু ফুল সাদা রঙের হয়ে থাকে। তালমাখনা বীজের রং গাঢ় খয়েরি এবং এটি দেখতে ও আকারে তিলের মতো দানাদার।

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা

মানবদেহের জন্য তালমাখনার বহু উপকারিতা রয়েছে। তালমাখনার ঔষধি বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার এবং এটি কম ফ্যাটযুক্ত। তালমাখনার উপকারিতা গুলো হলোঃ

১. বাতের ব্যথায়

বাতের ব্যথায় তালমাখনা বীজের তেল খুবই উপকারী।যে স্থানে বাতের ব্যথা সেখানে এই তেলটি ব্যবহার করলে বাতের ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যাবে। এছাড়াও তালামাখনার পাতার পেস্ট ব্যাথাকৃত স্থানে ব্যবহার করলেও ব্যথা কমবে।

২. ডায়াবেটিসের সমস্যায়

যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা তালমাখনা খেতে পারেন। কারণ এই বীজটি লো ফ্যাট যুক্ত হবার কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।

৩. লিভারের সমস্যায়

আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে লিভার। তাই আমাদের সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই লিভারকে সুস্থ রাখতে হবে। লিভার জনিত বিভিন্ন রোগ বা পীড়ায় তালমাখনার পাতা বেশ কার্যকরী। তালমাখনা সঠিক নিয়মে খেলে লিভারের সমস্যা থেকে উপকৃত হওয়া যাবে।

৪. মূত্রণালীর সমস্যায়

মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- প্রস্রাবের সমস্যা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা ও মূত্রথলিতে পাথর হওয়া সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও মূত্রথলির পাথর দূর করতেও এটি সক্ষম।

৫. হজম সমস্যায়

যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা এই ভেষজ ঔষধি গুন সম্পন্ন তালমাখনা খেতে পারেন। কারণ এর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজমের সমস্যা সমাধান করে। এছাড়াও এটি হজম শক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে।

৬. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেতে পারেন। এটি পেট ফোলা, বুকে জ্বালাপোড়া ও গ্যাস জনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

৭. হরমোনের সমস্যায়

হরমনের সমস্যার কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যায় ও শরীর দুর্বল থাকে। তালমাখনা হরমনজনিত বিভিন্ন সমস্যা সহ শরীরের দুর্বলতা সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এই সমস্যা গুলো সমাধানে আপনারা তালমাখনা সেবন করতে পারেন।

৮. যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনা বেশ কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ যৌন দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা গ্রহণ করে। এটি নিয়মিত সেবন করলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এর ক্ষতিকর দিকগুলো হলোঃ

  • তালমাখনা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করলেও, অতিরিক্ত সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা উল্টো আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অনেকের শুকনো তালমাখনা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। এভাবে সবসময় খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • তালমাখনা হরমন ও যৌনশক্তি বর্ধোক হওয়ার ফলে এটি পরিমানের চেয়ে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে হরমনের অধিক বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • তাললমাখনা আঠালো জাতীয় পদার্থ হওয়ার কারণে এটি কমপক্ষে ২০ মিনিট বা তার চেয়ে বেশি সময় ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে নয়তো পেটে অন্তক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আরো পড়ুন: মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম

তালমাখনা বিভিন্ন রোগের জন্য ওষুধ হিসেবে খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। যেমন:

  • তালমাখনা বীজ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সেটি ধীরে ধীরে ফুলে উঠবে। তারপর এটি সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা পাবেন।
  • শারীরিক দূর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ৩ গ্রাম পরিমাণ তালমাখনা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে খেতে পারেন।
  • যৌন দুর্বলতা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতি রাতে এক গ্রাস দুধে ৩ গ্রাম পরিমাণ তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে পান করবেন। ঘুমানোর পূর্বে ৩ গ্রাম পরিমাণে তালমাখনা দুই/তিন চা চামচ মধুর সাথে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে পান করতে হবে।
  • পস্রাবের জ্বালা পোড়া দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে অথবা যেকোনো সময় আখের গুরের সাথে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পান করবেন।

শেষকথা

উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে তালমাখনা সেবন করুন। তাহলে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা পাবেন। তবে ঔষধি প্রয়োজনে তালমাখনা সেবন করতে চাইলে, বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা সমূহ।

Scroll to Top