আদার উপকারিতা, ক্ষতিকর দিক ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আদা (Ginger) খুবই শক্তিশালী একটি মশলা। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এটি উৎপাদিত হয়। যদিও এটি খুব সুস্বাদু নয়, তবে এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। বহু গুণ সম্পন্ন এই আদার উপকারিতা, ক্ষতিকর দিক ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন এই লেখা থেকে।

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে আদা প্রায় সব ধরনের রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হজমের সমস্যা, গ্যাস অম্বলের সমস্যায় আমরা আদা ব্যবহার করে থাকি। তাই আদার ব্যবহার কতটা যথার্থ, আদার উপকারিতা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এই লেখাতে তুলে ধরা হলো।

আদার পুষ্টিগুণ

আদা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন – সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঞ্জেরল, শোগাওল, জিঞ্জিবেরিন, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট ইত্যাদি বিদ্যমান।

এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় যা রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এজন্য এটি সব বয়সী মানুষের জন্য অনেক উপকারী। তাছাড়া শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই এটি খেতে পারে।

আদার উপকারিতা

আদার উপকারিতা

আদা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি খেয়ে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করা সম্ভব। আদা খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলোঃ

১.ক্যান্সার প্রতিরোধে

আদাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ “জিনজেরোল”। এটি ক্যান্সারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর আরেকটি উপাদান রয়েছে শোগাওল। এটি স্তন ক্যান্সারের মূল কোষ গুলোকে পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে।

২. কাশি ও কফ দূর করে

যাদের কাশি ও কফের সমস্যা রয়েছে তারা আদা খেতে পারেন। এই সমস্যা নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন দু-বেলা এক চা-চামচ আদার রস, মধু ও লেবুর রস এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন। এতে আপনার কাশি কমবে ও কফের সমস্যাও দূর হবে।

৩. গলা ও মাথা ব্যাথায়

গলা ও মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য কাঁচা আদার উপকারিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সামান্য লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। তাহলে সাথে সাথে গলা ও মাথা ব্যাথা কমে যাবে। আর রোগ সারাতে হলে প্রতিদিন এটি চায়ের মত করে খেতে হবে। এক চা চামচ আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

৪. বাতের ব্যাথায়

বাতের ব্যাথা নিরাময়ের জন্য আদার রস খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড়কে মজবুত করে এবং এর ফলে বাতের ব্যাথাও হ্রাস পায়।

৫. মাসিকের ব্যাথা নিরাময়ে

মাসিকের ব্যাথা নিরাময়ের জন্য আদার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। তাই মাসিকের সময় অসহ্য ব্যাথা নিরাময়ের জন্য আদা চা খেতে পারেন। তাহলে আপনি ব্যাথা থেকে উপশম পাবেন।

৬. পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বর্ধক

আদাতে বিদ্যমান বিভিন্ন গুণাবলীর জন্য এটি পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বর্ধক হিসেবেও কাজ করে। প্রতিদিন আদার গুড়া, আমলকির গুড়া ও মধু সমপরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে চা করে খেতে পারেন। এতে আপনার পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

৭. শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যায়

শ্বাসকষ্ট অথবা ফুসফুসের ধমনীতে কোন সংক্রমণ থাকলে আদার রস খেতে পারেন। সরাসরি আদার রস খেতে না পারলে চা করে খেতে পারেন। প্রতিদিন দুবেলা করে এই চা খেলে এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খেলে ১৫ দিনের মধ্যে আপনি উপকারিতা পাবেন।

আদা খাওয়ার নিয়ম

আদার উপকারিতা পেতে নিয়ম অনুযায়ী আদা খেতে হবে, অন্যথায় এর উপকার পাওয়া যাবে না। এটিকে পিষে অথবা ব্লেন্ডার করে অনেকদিন যাবত ফ্রিজে রেখে খেলে এর কোন উপকারিতা পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে আদাকে ছেচে অথবা পিষে চা করে সাথে সাথে খেলে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে। এছাড়া এটি চিবিয়ে রস খেলেও এর গুনাগুন পাওয়া যাবে।

আদার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক

আদার মধ্যে অনেক ধরনের ঔষুধি গুণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে উপকারিতার আশায় যদি এটি বেশি মাত্রা খাওয়া হয় তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অন্যান্য সবকিছুর মতো আদারও উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হলোঃ

  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঔষুধ সেবন করলে আদাকে না খাওয়াই উচিত। কারণ এটি বেশি মাত্রায় খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে ফলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
  • এটি বেশি মাত্রায় খেলে শরীরে এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
  • এটি বেশি খেলে ডায়রিয়া ও পেটের ব্যাথা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় এটি খেলে বাচ্চা প্রিম্যাচিউর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই গর্ভাবস্থায় এটি না খাওয়াই উচিত।
  • আদা চা বেশি পরিমাণে খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে এবং ঘুমের সমস্যাও হতে পারে।

আরও পড়ুন: আলকুশি বীজের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

শেষকথা

সুস্থ থাকতে নিয়মিত খাবারের সাথে আদার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নানাভাবে আমাদের দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে আদার উপকারিতা পেতে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক মাত্রায় খেতে হবে।

Scroll to Top