ডালিম এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ডালিম এক রকমের একটি সুস্বাধু ফল। ডালিম বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন ডালিম, বেদানা, আনার এবং বৈজ্ঞানিক নাম (Punica Granatum) ডালিম গাছ ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয়। ফলের ভিতরে লাল রঙ্গের দানা দানা থাকে। সেগুলি আমরা খেয়ে থাকি। ডালিম এর উপকারিতা রয়েছে।

ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ডালিমে আরসোলিক এসিড, বিউটেলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- পেপরেটাইরিন, সিডোপেরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।

ডালিমের উপকারিতা গুলি যেনে নেওয়া যাক

ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারসহ ভিটামিন K ও C এবং ভিটামিন B রয়েছে। এ ছাড়াও আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো প্রচুর মিনারেল আছে ডালিমে। এগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ডালিম এর উপকারিতা

১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মানব দেহে রক্তচাপ বেড়ে গেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডালিম নিয়মিত খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

২। রক্তপাত বন্ধঃ শরীরের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিমের ফুল অথবা গাছের পাতা কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।

৩। পাইলস নিরাময় করেঃ পাইলস রোগটি আমাদের নিকট অর্শ বা অরিশ হিসেবে পরিচিত। যাদের এই রোগ আছে , পরিমান মত ডালিম গাছের পাতা আর শিয়াল মতি গাছের শিকড় ৫টি করে ৫ দিন খেলে পাইলস নিরাময় করতে সাহায্য।

৪। আমাশয় নিরাময়ে সাহায্য করেঃ যাদের আমাশয় রোগ আছে, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভালো ফল পাওয় যায়।

৫। ডায়াবেটিসে উপকারীঃ ডালিম খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। মিষ্টি ফল হলেও ডায়াবেটিস রোগিদের বিশেষ উপকারে আসে। প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডালিম ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। তবে এ ধরনের রোগীর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবার খাওয়া উত্তম।

৬। হার্টের ঝুঁকি কমায়ঃ হার্টের ঝুঁকি কমাতেও চিকিৎসকরা ডালিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে, এমনকি উত্তেজনা বৃদ্ধিতেও পুরুষদের জন্য ডালিম অনেক উপকারী। এই ফল আপনার শরীরের কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে শরীরে রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায়।

৭। শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ঃ যেসব শিশু পেট বড় হওয়া , পেটের পীড়ায় ভোগে তাদের জন্য ডালিম গাছের শিকড়ের ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

৮। গর্ভপাত নিরাময়ঃ দেখা যায় বহু মহিলা গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। প্রায় মহিলার একাধিকবার এরকম হযয়ে থাকে। ডালিম গাছের পাতা কচলিয়ে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে পান করলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দূর হয়। শরীরে পানির মাত্রাও বজায় রাখতে ডিহাইড্রেশন রোধ করে এই ফল।

৯। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ যাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের জন্য ডালিম অনেক উপকারী। এই ফল স্মৃতিশক্তি বা মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।

১০। কৃমিনাশকঃ কৃমির সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেশি। ছোট বড় সবাই এই সমস্যায় আছেন । আমাদের শরীরে যদি কৃমির মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে খিদে না পাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, বমি বমি ভাব এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড় করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে ক্রিমিনাশ হয়।

ডালিম গাছের শিকড় থেকে শুরু করে বাকল, ফলের খোসা সবই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ডালিমের অপকারিতা

  • যাদের সর্দি কাশি আছে, তারা ডালিম ফল খেতে পারবেনা। কারণ ডালিম ফল ঠান্ডা জাতীয় ফল।
  • যারা মানসিক রোগের ঔষধ নিয়মিত খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য ডালিম বা আনার বিষের সমান, তাইন সাবধান।
  • এলার্জি সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য ডালিম বা আনার খাওয়া চলবে না। অন্যথায় আপনার এলার্জি বেড়ে যাবে।
  • রক্তচাপ কম যাদের ডালিম বা আনার খাওয়া খুব ক্ষতিকর।
Scroll to Top