আলকুশি বীজ (Alkushi seeds) অনেক ঔষধ দিয়ে গুণসম্পন্ন বীজ। দেখতে অনেকটা সিমের বিচির মতো হলেও এটি ভিন্ন এবং বহু উপাদান সমৃদ্ধ। মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই আলকুশি বীজ কি, আলকুশি বীজের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে জানতে পারবেন এই লেখাতে।
আলকুশি বীজ কি?
আলকুশি বীজ হলো ঔষুধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি বীজ। আলকুশি বীজ বা বীজের পাউডার প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদটি বিলাই খামচি হিসেবেও পরিচিত। এই উদ্ভিদের পাতা, বীজ, শিকড় সমস্ত অংশগুলোই ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন। এটি প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি উৎস রয়েছে এই বীজে।
আলকুশি গাছের পরিচিতি
আলকুশি বীজ দেখতে অনেকটা সিমের মত। এর ইংরেজি নাম ‘Velvet Bean’ বা ‘Nescafe’। এর বৈজ্ঞানিক নাম “Mucuna Prurien”। এর পাতা ৬-১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সিম ফুলের মত লালচে বেগুনি ফুল ফুটে। এর শুঁটিগুলো ২.৫ – ৪ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং এটি দেখতে লাল খয়েরি ভেলভেট এর মত সূক্ষ রোয়ায় আবৃত।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
আলকুশি বীজ বা পাউডারের প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। আলকুশি বীজ থেকে শুরু করে শিকড় সবকিছুই ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন। এর বীজ ও পাউডারের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১. পোকার কামড়ের ব্যাথা থেকে উপশম
কোন পোকা মাকড়ের কামড়ে, মৌমাছির কামড়ে বা বিছের দংশনে আলকুশীর বীজের গুড়া লাগালে অনেক যন্ত্রণা কমে যায়। তাই এই ব্যথা দূর করতে এই বীজের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন।
২. আমাশয় নিরাময়ে
যারা দীর্ঘদিন যাবত আমাশয় রোগে ভুগছেন তারা আলকুশির শিকরের রস খেতে পারেন। কারণ নিয়মিত এর রস খেলে দীর্ঘ দিনের পুরনো আমাশয় রোগ ভাল হয়ে যায়।
৩.জ্বর ও সর্দি কাশি নিরাময়ে
আলকুশি গাছের শিকড়ের রস খেলে জ্বর ও সর্দি কাশির সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকদিন ধরে বুকে জমে থাকা কফের সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
৪. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে আলকুশি বীজের উপকারিতা অনেক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত এই বীজের গুড়া এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ক্লান্তি দূর হয় ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি সকালে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি খেতে পারেন।
৫. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে
আলকুশি বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো এসিড। এটি ডোপামিন বৃদ্ধিতে কাজ করে। তাছাড়া এই ডোপামিন নামক উপাদান মানুষের স্মৃতিশক্তি, সুখ, একাগ্রতা, বিভিন্ন চিন্তাধারা ও মানুষিক শক্তিকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। আলকুশি বীজ ন্যুট্রপিক উপাদানে ভরপুর যা স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৬. বন্ধ্যাত্বতা দূর করে
বন্ধ্যাত্বতা এর কারন হলো শরীরে কম মাত্রায় টেস্টস্টরেন ও অস্বাভাবিক ফলিকন স্টিমুলেটিং হরমোন ও পোল্যাক্তিন থাকে। আলকুশি বীজের উপকারিতা পেতে নিয়মিত পাউডার সেবন করলে পোল্যাক্তিন ও ফলিকন স্টিমুলেটিং হরমোন ও স্বাভাবিক হয়ে যায়। ফলে সমস্যা সমধান হয়ে যায়।
৭.যৌন স্বাস্থ্য রক্ষায়
আলকুশি বীজ বা পাউডার প্রজনন ক্ষমতাকে উন্নত করে। এতে বিভিন্ন অ্যালকালয়েড থাকে, যা টেস্টোস্টেরন সংশ্লেষণকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ফলে এটি নিয়মিত খেলে শুক্রাণু বৃদ্ধি করে যা প্রজনন এর ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে। এটি টেস্টস্টরেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি ও গতিশীল করে। ফলে যৌন ক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যায়।
৮. ডায়বেটিস রোগে
আলকুশি বীজে লেভোডোপা (Levodopa) রয়েছে যা রক্তে শর্করা ও কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর পাউডারে ডি চিরো ইনোসিটল নামক একটি উপাদান রয়েছে। এটি ইন্সুলিন এর প্রভাব অনুকরন করতে পারে এবং রক্তে সুগার এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি বীজের উপকারিতা পেতে বিভিন্ন নিয়মে খাওয়া যায়। নিম্নে তার কয়েকটি নিয়ম দেওয়া হলোঃ
ক্যাপসুল হিসেবে
ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসবে আলকুশি বীজের ক্যাপসুল পাওয়া যায়। শুক্রাণু বৃদ্ধিতে এই ক্যাপসুল অনেক কার্যকরী। তাই ক্যাপসুল খাওয়ার আগে অবশ্যই কোন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
পাউডার হিসেবে
এক চা চামচ আলকুশি পাউডার গরম দুধের সাথে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও রাতে খাওয়ার পরে ঘুমানোর আগে খাওয়া উত্তম ও ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও পাউডারটি আটার সাথে মিশিয়ে রুটি বানিয়েও খেতে পারেন।
বীজ হিসেবে
আলকুশি বীজ কাচা অবস্থায় সবজির মত তরকারিতে দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। সিমের বিচির মতো ভেজে অথবা সিদ্ধ করেও খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও তাজা বীজ গুলা সিদ্ধ করে বেটে ভর্তা করে ও সালাদ হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
চা হিসেবে
আলকুশি পাউডার চা হিসেবেও খাওয়া যায়। গরম পানিতে ১ চামচ আলকুশি পাউডার, ১ চামচ গুড় বা চিনি, ১/২ চামচ দারুচিনি গুড়া মিশিয়ে দুই মিনিট জাল দিয়ে চা করে খেতে পারেন।
আলকুশি বীজের অপকারিতা
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম জেনে খেলে এর কোনো অপকারিতা নেই। তবে আলকুশি বীজের উপকারিতা পেতে সঠিক নিয়মে না খেলে, কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:
আরো পড়ুন: তালমাখনা কি? তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- গর্ভবস্থায় খেলে ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে এবং বাচ্চার জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটি হতে পারে। তাই এই অবস্থায় আলকুশি বীজ এড়িয়ে চলতে হবে।
- আলকুশি বীজে থাকা লেভোডোপা লিভারের সমস্যাকে আরো প্রভাবিত করে তোলে।
- যাদের নিউরোপ্যাথি, সাইকোসিস ও হার্টের চিকিৎসা চলছে তাদেরকে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত আলকুশি সেবনের ফলে হ্যালোসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আলকুশি বীজের দাম
আলকুশি বীজ, পাউডার ও ক্যাপসুল এর দাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আলকুশি পাউডার এর দাম প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা কেজি। অনেক সময় এর চেয়ে একটু কম দামও হতে পারে।
শেষকথা
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, সঠিক পরিমাণে নিয়মিত ব্যবহার করলে আলকুশি বীজের উপকারিতা পাওয়া যাবে ব্যাপকভাবে। পারিপার্শ্বিক ভাবে এর মূল্য বেশি মনে হয়। তবে গুনাগুন বিবেচনায় তা যথার্থ।
সম্মানিত ভিজিটর আমি নজরুল ইসলাম,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং লাইফস্টাইল সম্পর্কে লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।