আখরোট এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়মাবলী

পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাদ্য হিসেবে আখরোটের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবে অনেকেই জানেনা আখরোট কি এবং আখরোট এর উপকারিতা সম্পর্কে।

আখরোট কি, আখরোট এর উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও দাম কেমন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই লেখাতে

আখরোট কি?

(Walnuts) আখরোট হলো এক প্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এটি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। আর এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ভিটামিন ই, আমিষ ও ফ্যাটি অ্যাসিড।

এই ফলটি দেখতে গোলাকার এবং এর ভিতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসাটি ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত যে খোলস যুক্ত বীজটি পাওয়া যায়। এই খোলসের ভেতরে যে অংশ থাকে সেটা দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে কালো ও বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই বাদামে থাকা উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রকম অসুখ থেকে রক্ষা করে।

আখরোটের পুষ্টিগুন

এটি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল বা বাদাম। ১০০ গ্রাম আখরোটে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে তা নিম্নে দেয়া হলোঃ

  • প্রোটিন – ১৫.২ গ্রাম।
  • ক্যালসিয়াম – ৯৮ মিলিগ্রাম।
  • ম্যাগনেসিয়াম – ১৫৮ মিলিগ্রাম।
  • পটাশিয়াম – ৪৪১ মিলিগ্রাম।
  • স্নেহ পদার্থ – ৬.৭ গ্রাম।
  • ভিটামিন – ২০ IU।
  • জিংক – ৩.০৯ মিলিগ্রাম।
  • ফসফরাস – ৩৪৬ মিলিগ্রাম।
  • শর্করা – ১৩.৭১ মিলিগ্রাম।
  • ম্যাঙ্গানিজ – ৩.৪১৪ মিলিগ্রাম।

এছাড়াও আখরোটের মধ্যে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর প্রোটিনের মধ্যেও আরো অনেক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।

আখরোট গাছ

এই গাছের ইংরেজি নাম হলো ওয়ালনাট (Walnut) এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Juglans regia। এই গাছটি জুগল্যান্ডাসি গোত্রের একটি পর্ণমোচী বৃক্ষ। এই গাছটি সাধারণত ১০ মিটার থেকে ৪০ মিটার (৩০ ফুট – ১৩০ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। এই গাছের পাতাগুলো দেখতে পালকের মতো। সাধারণত পাতাগুলো ৭-৩৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

আখরোট এর উপকারিতা

আখরোট আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ হওয়া থেকেও রক্ষা করে। আখরোট এর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

আখরোট এর উপকারিতা

১. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আখরোট একটি কার্যকরী উপাদান বা খাবার। নিয়মিত আখরোট খেলে আমাদের শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। যা ডায়াবেটিসের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন খেতে হবে।

চিকিৎসকের মতে এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

২. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে আখরোট এর উপকারিতা রয়েছে। ফ্রি রেডিক্যাল রাসায়নিক মানুষের স্মৃতি শক্তি নষ্ট করে। আর আখরোটে রয়েছে ভিটামিন ই ও ফ্ল্যাবনয়েড। এই উপাদানটি আমাদের রক্তের মধ্যে থাকা ফ্রি রেডিক্যাল রাসায়নিক কমাতে কার্যকর। এছাড়াও এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অনেক উপকারী । তাই মস্তিষ্কের বিকাশে নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন।

৩. হার্ট ভালো রাখে

আখরোটে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য উপকারী। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েকটি করে বাদাম খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুস্থ থাকার জন্য হার্ট ভালো রাখতে হবে। আর হার্ট ভালো রাখতে হলে নিয়মিত আখরোট খেতে হবে।

৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সারের ভাইরাস ধ্বংস করতেও আখরোট এর উপকারিতা রয়েছে। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিফেনলস এবং ইউরোলিথিন অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। এটি স্তন, কোলন এবং প্রোস্টেট রোধে বড় ভূমিকা রাখে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ জানিয়েছে আখরোট খেলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৫.গর্ভাবস্থায় উপকারী

আখরোটে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এগুলো হবু মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও আখরোটে রয়েছে ফলিক এসিড যা গর্ভবতী ও অনাগত সন্তানের জন্য অনেক উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন আখরোট খাওয়া প্রয়োজন।

৬. হাড় শক্ত করে

হাড় ভালো রাখতে নিয়মিত আখরোট খাওয়ার উপকারিতা অনেকে। এতে আছে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড নামে একটি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। হাড়কে সুস্থ রাখতে এই অ্যাসিড সাহায্য করে। এছাড়াও আখরোটে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা হাড়কে ভালো রাখে। আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এটি শরীরের হাড় মজবুত করতে খুবই উপকারি।

৭.ভালো ঘুম হয়

এই বাদামটি পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, আয়রনে ভরপুর। তাই আমাদের হজম শক্তিকে বাড়াতে আখরোট এর উপকারিতা রয়েছে। আর উন্নত হজমশক্তি ভালো ঘুমে হতে সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে আখরোট খেলে, ভালো ঘুম হয়।

৮. স্ট্রেস কমায়

অতিরিক্ত চিন্তা থেকেই স্ট্রেস বা উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। আর এই স্ট্রেস কমাতে আখরোট অনেক উপকারি। আখরোটে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও লাইনোলেনিক এসিড ইত্যাদি উপাদান যা স্ট্রেস কমাতে অনেক উপকারী।

৯. ত্বকের যত্নে

বয়সের সাথে সাথে মানুষের ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে বিভিন্ন বলিরেখা দেখা দেয়। ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজের কারণে মূলত এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। আখরোটে রয়েছে ভিটামিন বি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ফ্রী রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়।

১০.চুলের যত্নে

চুলের যত্নে আখরোটের ভূমিকা অনেক। কেননা এতে রয়েছে বায়োটিন বা ভিটামিন ৭। এটি আমাদের চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল সোজা করে ও চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই চুলকে সুন্দর রাখতে নিয়মিত আখরোট খান।

আখরোটের অপকারিতা | পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আখরোটের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক রয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে যে কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। বেশি পরিমানে খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমনঃ

যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তারা বেশি পরিমানে খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কালো আখরোটে থাকা ফাইটেটস শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে। এর ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন: অপারেটিং সিস্টেম কি?

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

এই আখরোট খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। যার যেভাবে ইচ্ছা সে সেভাবেই খেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভেজানো বাদাম খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে খাওয়ার আগে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও দুধ ও মধুর সাথে একত্রে মিশিয়ে খেলে আরো বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

আখরোট এর দাম কত ?

আখরোটের উপকারিতা পেতে প্রতি ১ কেজি আখরোটের দাম দিতে হবে প্রায় ২ হাজার টাকা। সাধারণ মানের আখরোটের ৫০০ গ্রামের দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর ভালো মানের ৫০০ গ্রামের মূল্য ১০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম কিনতে পারবেন ১০০ টাকা দিয়ে।

এক সাথে ৫ কেজি আখরোট কিনলে আপনারা কিছুটা কম দামে পেয়ে যাবেন। ৫ কেজি আখরোটের মূল্য ১০০০০ টাকা হলেও, তখন ৯৭০০ থেকে ৯৮০০ টাকায় বিক্রি করা হবে। এটি শুধু পাইকারি মূল্য পাওয়া যাবে।

আখরোট ও মধুর উপকারিতা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মধু ও আখরোটের উপকারিতা অনেক। এটি আমাদের শরীরের রক্ত শূন্যতা সমস্যা দূর করে এবং গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। আর মধু ও বাদামের মিশ্রণ এর উপকারিতা অনেক ও শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অতুলনীয় স্বাদের এই স্পেশাল মধুযুক্ত বাদামগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি বৃদ্ধিতে অনেক বড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উভয় পণ্যতে এমন পদার্থ রয়েছে যা টেসটোসটের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে – পুরুষ হরমোন। এই মিশ্রণটি বীজের গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে।

শেষকথা

মানবদেহের জন্য আখরোট এর উপকারিতা অনেক বেশি হলেও, এর বাজার মূল্য অনেক বেশি। তাই সকলের জন্য এটি ক্রয় করা এবং সেবন করা সম্ভব হয় না। তবে সামর্থ্য থাকলে নিয়মিত আখরোট খেলে, তা সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক উপকারিতা বয়ে আনবে।

Scroll to Top